Tämä sivusto käyttää evästeitä palvelujen toimittamiseen, toiminnan parantamiseen, analytiikkaan ja (jos et ole kirjautunut sisään) mainostamiseen. Käyttämällä LibraryThingiä ilmaiset, että olet lukenut ja ymmärtänyt käyttöehdot ja yksityisyydensuojakäytännöt. Sivujen ja palveluiden käytön tulee olla näiden ehtojen ja käytäntöjen mukaista.
স্প্যানিশ সাহিত্যের কথা উঠলে আমাদের বেশীরভাগের মনেই যে নামটি ভেসে ওঠে তা সম্ভবত ১৬০৫ সালে প্রকাশিত মিগুয়েল দে সারভান্তেস রচিত অমর কমেডি ‘ডন কিহোতো’। এই এক রচনা দিয়েই সারভান্তেস দেশ কাল ভেদে কোটি কোটি সাহিত্যপ্রেমীর অন্তরে মোটামুটি পাকাপাকিভাবে স্থান করে নিয়েছেন। স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসনের সুবাদে স্প্যানিশ ভাষাটি ইওরোপের দু’লক্ষ বর্গমাইলের ঐ ছোট্ট গণ্ডিটি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে। স্প্যানিশ আজ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি ভাষার অন্যতম একটি। খোদ স্পেনে যেখানে কুল্যে এক কোটি স্প্যানিশভাষী আছে, বিশ্বজুড়ে স্প্যানিশভাষী আছে বিশ কোটি, যার একটা বড় অংশই আবার দক্ষিণ আমেরিকাতে। আজ স্প্যানিশ সাহিত্যের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন কলাম্বিয়ান মার্কেজ, আর্জেন্টাইন হোর্হে বোর্হেস, পেরুভিয়ান মারিয়া ভার্গাস ইয়োসা; এঁদের মাঝে দুজনের ঝুলিতে আছে নোবেল পুরষ্কার। অ্যাঞ্জেল ফ্লোরেসের সম্পাদনায় Great Spanish Stories বইটিতে সংকলিত গল্পগুলো অবশ্য স্পেন দেশীয়, দক্ষিণ বা মধ্য আমেরিকান লেখকদের তাই এখানে স্থান নেই! নাম না জানা, আমার কাছে একেবারেই অচেনা এক ঝাঁক স্পেনীয় লেখকের সাথে পরিচিতি ঘটে গেলো এই বইয়ের উছিলায়, যাঁদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন অবদানে স্প্যানিশ সাহিত্য হয়েছে সমৃদ্ধ।
Great Spanish Stories-এ সংকলিত হয়েছে ১৬টি গল্প। সবই যে আসলে প্রচলিত অর্থে ‘গল্প’ এমনও নয়। ব্যাপ্তিতে দীর্ঘ এমন গল্প যেমন আছে-উইকিপিডিয়া যেটিকে ‘নভেলা’ সংজ্ঞায়িত করেছে- দু’-তিন পৃষ্ঠার ছোট গল্পও তেমনি আছে। ছাত্রজীবনের মধ্যগগনে থাকবার অন্যতম একটি কুফল হলো কলেবরে দীর্ঘ বই পড়ার সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসা। সে কারণেই বইটিতে সংকলিত ছোট ছোট গল্পগুলোর প্রতিই আগ্রহটা বেশী ছিলো, সবার আগে পড়তে বসেছিলাম সেগুলোই। কিন্তু বইটিতে ঠাঁই পাওয়া ম্যাক্স অব, হোসে মারিয়া জিরোন্নেলা, কারমেন লাফোরেত, রাফায়েল দিয়েস্তস, রোসা চাচেল, আন্তনিও সানচেজ বারবুদো এঁরা সবাই ই হতাশ করেছেন। সময়ের সাথে সাথে বইটির শিরোনামের ‘Great’ বিশেষণটির ওপর ক্রমশই সন্দিহান হয়ে পড়ছিলাম!
প্রথম চমকটা পেলাম ফ্রান্সিসকো আয়ালার ‘দি বিউইচড’ (El Hechizado) গল্পটি পড়তে গিয়ে। গল্পের ‘বিউইচড’ বা 'জাদু-টোনাকৃত' অভিশপ্ত ভদ্রলোকটি হলেন হাবসবার্গ বংশের শেষ রাজা দ্বিতীয় চার্লস (১৬৬১-১৭০০)। ‘বিউইচড’ এর প্রসঙ্গে দ্বিতীয় চার্লসের ব্যাপারে ক’টি তথ্য জুড়ে না দিলেই নয়! হাবসবার্গ বংশটি ইওরোপের একটি বড় অংশ শাসন করেছে ১১শ শতক থেকে ১৭০০ সাল পর্যন্ত। এদের সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিলো ইওরোপের অস্ট্রিয়া, জার্মানী, হলি রোমান এম্পায়ার থেকে হাঙ্গেরী-ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল হয়ে উত্তর আমেরিকা লাগোয়া মেক্সিকো তক। দ্বিতীয় চার্লস এই হাবসবার্গ বংশের শেষ বাতি। নিজেদের রাজকীয় রক্তের শুদ্ধতা ধরে রাখতে হাবসবার্গ বংশে আন্তঃপারিবারিক বিবাহের ব্যাপারটি অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হতো। চার্লস দি সেকেন্ডের বাবা-মা ছিলো সম্পর্কে মামা-ভাগিনেয়। আন্তঃপারিবারিক সম্পর্কের জন্যই হাবসবার্গ বংশে নানারকম রোগব্যাধির প্রকোপ ছিলো, যার চূড়ান্ত রূপটা ধরা পড়ে এই দ্বিতীয় চার্লসের ভেতর (স্পেনেরই এক বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ সান্তিয়াগো দেল কম্পোস্তেলা হাবসবার্গ পরিবারের ১৬টি প্রজন্মের ৩০০০ সদস্যের ওপর গবেষণা করে আন্তর্জননকে পরিবারটির বিলীন হিয়ে যাবার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে)। চার্লস চার বছর বয়েস হবার আগে কথা বলতেই শেখেননি। সিংহাসনে আরোহণও তাঁর ঐ চার-এই। আজীবন মানসিক বৈকল্য নিয়ে বেঁচে থাকা চার্লসের শারীরিক ত্রুটিরও কোন অন্ত ছিলোনা। নির্বীজ হওয়ায় কোন বংশধরও রেখে যেতে পারেননি। ৩৮ বছর বয়েসে মারা যাবার আগে জীবনের শেষের দিকে রাজকার্য থেকে অবসর নিয়ে খেলাধুলো ও বিনোদনের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন চার্লস। চার্লসের মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তের ভারে থাকা ডাক্তার কাটাকাটি শেষে যে রায় দিয়েছিলেন তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়,
চার্লসেরঃ
(ক) শরীরে এক বিন্দুও রক্ত ছিলোনা। (খ) হৃৎপিণ্ড আকারে গোলমরিচের সমান ছিলো। (গ) কুচকুচে কালো বর্ণের একটিই মাত্র অণ্ডকোষ ছিলো। (ঘ) খুলিতে মগজ বলতে কিছু ছিলোনা, ছিলো শুধু পানি!
চার্লস প্রসঙ্গে অনেক লম্বা গল্প ফেঁদে ফেলেছি, মূল প্রসঙ্গে যেতেই পারছিনা। চার্লসের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিবৃতি পড়লে বুঝতে কষ্ট হয়না রাজ্যপতি হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন। চার্লস যখন সিংহাসনে আসীন হন, স্পেন তার গৌরব হারাতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। অর্থনৈতিক মন্দা বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, খরায় প্রজাদের প্রাণপাতও কিছু কম হচ্ছেনা। ফ্রান্সিসকো আয়ালা এই সময়কেই ধরেছেন তাঁর ‘দি বিউইচড’ গল্পে। স্প্যানিশ এক নাগরিক বহু নিয়মকানুনের যাঁতাকল ঠেলে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে স্পেনের রাজা চার্লসের দরবারে হাজির হন রাজার দেখা পাবার আশায়। কিন্তু জড়বুদ্ধির রাজাকে দেখে স্প্যানিয়ার্ডের মোহ ভাঙ্গে, বুঝতে পারেন, রাজা কথাই বলেন বহু ক্লেশে, রাজ্য পরিচালনা তো দূর কি বাত। মূলত দু’টি বিষয় উঠে এসেছে এই গল্পে। এক হলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রগুলোতে অহেতুক কালক্ষেপণকারী ফালতু নিয়মের বোঝা- আধুনিক সময়ে যার গালভরা নাম ‘প্রটোকল’-আর দ্বিতীয়টি হলো অযোগ্য শাসকের হাতে দেশের শাসনভার। স্রেফ বংশগত অধিকারের সুবাদে একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মানুষকে দেশ পরিচালনার আসনে বসিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ প্রজার জীবন নিয়ে জুয়া খেলা হলো। হা বংশগৌরব! হা রক্তের শুদ্ধতা! ‘বিউইচড’ গল্পে ফ্রান্সিসকো আয়ালা এক ধরণের বিটকেলে সেন্স অফ হিউমারের পরিচয় দেন। আয়ালার এই দুষ্টুমি, পরিস্থিতি নিয়ে খেলা করবার এই ‘বদমায়েশি’ টা বাঙ্গালী পাঠককে মনে করিয়ে দেবে আহমদ ছফা কিংবা শহিদুল জহির এর কথা। ‘Great minds think alike’ নাকি ‘সব শেয়ালের এক রা’, সে আমি জানিনে, তবে হৃদয়ের গহীনে যে পবিত্র বেদীতে এতদিন ছফা এবং জহির বসে এসেছেন, তাঁদের সাথে এবার এসে যোগ দিলেন ফ্রান্সিসকো আয়ালাও। আমার রুচিবোধের ওপর যাঁদের বিশেষ আস্থা নেই, ছোট্ট করে এখানে জানিয়ে রাখি, হোর্হে বোর্হেস গল্পটিকে স্প্যানিশ ভাষার অন্যতম মাস্টারপিস বলে অভিহিত করেছেন!
পাঠককে ভাবাবার মতো আরেকটি গল্প মিগুয়েল দে উনামুনো’র ‘সেইন্ট ম্যানুয়েল বুয়েনো, মার্টায়ার’। স্প্যানিশ Bueno শব্দটির অর্থ ‘ভালো’। ভালভেরদে দে লুসেরনা গ্রামের এক পাদ্রী ডন ম্যানুয়েল তাঁর রোজগেরে জীবন যাপনে, পরোপকারে, দয়া দাক্ষিণ্যে এতোটাই ত্যাগী ও উদারহস্ত, তাঁর মহত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ গ্রামবাসীর মুখে bueno শব্দটিই একসময় তাঁর নামের অংশ হয়ে পড়ে (এটি অবশ্য আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি, গল্পে নামের ব্যাখ্যায় এমন কিছু বলা হয়নি)। আক্ষরিক অনুবাদ করা হলে গল্পটির ইংরেজী নাম হবে Saint Manuel, the Good, Martyr। গল্পের কথক এক নারী (অ্যাঞ্জেলা) যে শেষ বয়েসে তার গ্রামের পাদ্রীর স্মৃতিচারণ করছে। অ্যাঞ্জেলার আমেরিকা প্রবাসী ভাই ল্যাজারাস ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয়, তার ধারণা ডন ম্যানুয়েল লোকটি ধাপ্পাবাজ বিশেষ, গ্রামের সহজ সরল লোকদের সামনে ভালোমানুষির মুখোশ পরে bueno হয়ে গেছে। এহেন ল্যাজারাসও একসময় স্বীকার করতে বাধ্য হয় ডন ম্যানুয়েল সত্যিই দারুণ ভালোমানুষ, ভালো করবার ইচ্ছেটা তাঁর আন্তরিক ই বটে। মানুষকে ঈশ্বরের পথে আনতে তাঁর পরিশ্রমের অন্ত নেই, আর সে পরিশ্রমে নেই কোন ক্লান্তি বা খেদ। ক্রমে ল্যাজারাস এবং সেই সাথে সাথে পাঠকও আবিষ্কার করে পরকালে ডন ম্যানুয়েলের আসলে কোন বিশ্বাস নেই, নেই ঈশ্বরেও! তাহলে কেন ডন ম্যানুয়েল বছরের পর বছর এই গ্রামে ধর্ম প্রচার করে যাচ্ছেন? কেন ঈশ্বরের পথে আসবার আহবান দিয়ে আসছেন? ভোরের আলো ফুটবার মতোই পাঠকের কাছে ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয় ডন ম্যানুয়েল আসলে শান্তি চান; নিজের মনের শান্তি নয়, গ্রামের মানুষেরা শান্তিতে বসবাস করুক এটাই ডনের চাওয়া। এরা কেউ ল্যাজারাস এর মতো বহির্মুখী নয়, চিন্তাশীল নয়; পৃথিবীর আর দশটা দিক দেখে, যুক্তি দিয়ে ভেবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেবে, এটি তাদের জন্য নিতান্তই কষ্টকল্পনা, এবং তাতে অশান্তিই বেশী বরং। এতগুলো নেহাৎ গেঁয়ো অর্ধ-অল্পশিক্ষিত মানুষকে ঝগড়া বিবাদ থেকে দূরে সরিয়ে ঈশ্বর নামের ছায়াতলে একত্র করে ডন ম্যানুয়েল শান্তি খোঁজেন। এই কাজেই তিনি গোটা জীবনটা ব্যয় করে দেন ভালভেরদে দে লুসেরনা নামের সেই ছোট্ট গ্রামে। ডন ম্যানুয়েল কি 'শহীদ' নন?
ডন ম্যানুয়েলের গল্পটি লিখতে মিগুয়েল দে উনামুনো’র ২ মাস লেগে যায়। এটি ছোট গল্পও নয়, নভেলাও নয়। উনামুনো’র নিজস্ব আবিষ্কার ‘নিভোলা’। নিভোলার সংজ্ঞা কি, বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি,ইত্যাদি তত্ত্বগত আলোচনায় আগ্রহ থাকলে উৎসাহী পাঠক উইকিপিডিয়াতে Nivola নিবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন। সদ্য লব্ধ জ্ঞান কপচিয়ে অন্যদের আর ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে চাইছিনা আপাতত!
সংকলনের ১৬টি গল্পের মাঝে এই দুটি ছাড়াও আরো দু'টি গল্প বিশেষ ভালো লেগেছে। একটি পেদ্রো আন্তনিও দে আলারকন এর ‘দ্যা থ্রি কর্নার্ড হ্যাট’ ও আরেকটি লিওপল্ডো অ্যালাস এর ‘ডনা বারতা’। 'দ্যা থ্রি কর্নার্ড হ্যাট' স্প্যানিশ কমেডির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। পেদ্রো আন্তনিও’র মাঝে সারভান্তেস এর ছাপ তো আছেই, গল্পের স্যাটায়ারের মারপ্যাঁচ হালের জর্জ অরওয়েলকেও মনে করিয়ে দেবে! থ্রি কর্নার্ড হ্যাট এর ব্যাপারে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য তথ্য যোগ করাটা জরুরী। ১৯১৯ সালে স্প্যানিশ কম্পোজার ম্যানুয়েল দে ফাল্লা গল্পটির অবলম্বনে একই নামের একটি ব্যালে রচনা করেন, যা আজও সমান জনপ্রিয়। ইউটিউব ঢুঁড়লেই অসংখ্য ভিডিও পাওয়া যায় ফাল্লার এই ব্যালের; সেটাই এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ! এখানে বিবিসি প্রমস এ ২০১৩ সালে পরিবেশিত দ্যা থ্রি কর্নার্ড হ্যাট এর লিঙ্ক জুড়ে দিলুম। স্প্যানিশ সঙ্গীতের যে ঝংকারময় উদ্দাম বুনো রুপ, তার পুরোদস্তুর স্বাদ বিদ্যমান এতে!
'থ্রি কর্নার্ড হ্যাট' যেমন কমিক, হাস্যরসে ভরপুর, ‘ডনা বারতা’ তেমনি করুণ; পড়ে মন খারাপ হয় ভীষণ। জীবন-সায়াহ্নে দাঁড়ানো এক মায়ের তাঁর কখনো না দেখা যুদ্ধে নিহত অবৈধ সন্তানের প্রতিকৃতি একবার দেখতে চাওয়ার আকুতি আর হাহাকারের গল্প ডনা বারতা; রীতিমতো রুপালী পর্দার ছবির গল্প। ডনা বারতার লেখক লিওপল্ডো অ্যালাস স্প্যানিশ সাহিত্যেরই অন্যতম স্তম্ভ। অ্যালাসকে নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে জানতে পেলাম তাঁর উপন্যাস ‘লা রেজেনেতা’ (La Regeneta)’র কথা, যা উনিশ শতকেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি কাজ বলে সম্মানিত। চোখ বন্ধ করে তাই ‘লা রেজেনেতা’ চলে গেলো কখনো শেষ না হবার সেই তালিকায়।
টুকটাক আরো কিছু গল্প ভালো লেগেছে, এগুলোর উল্লেখ না করলে অন্যায়ই হবে। রেমন মারিয়া দেল ভাল্লে-ইনক্লান এর ‘সোনাটা অফ অটাম’ ও বেনিতো পেরেজ গালদোস এর ‘তর্কেমাদা ইন ফ্লেমস’ এদের মাঝে অন্যতম। পৃথিবীকে দেয়া স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপহার 'ম্যাজিক রিয়ালিজম', ল্যাটিন আমেরিকানদের চর্চার আধিক্যে যা স্প্যানিশ সাহিত্যেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে অনেকটা। জাদুবাস্তবতার ছাপ এসেছে এই সংকলনের কয়েকটি গল্পেও (যেমন ‘মাস্টার পেরেজ দি অরগ্যানিস্টঃ’ গীর্জার মায়েস্ত্রো অরগ্যান বাদক মাস্টার পেরেজের মৃত্যুর পর ভুত হয়ে অরগ্যান বাজাতে চলে আসা) ও ‘দ্যা ক্যাথিড্রাল অফ হার্টস’ (মানুষের তাজা হৃৎপিণ্ড দিয়ে ক্যাথিড্রাল বানাবার গল্প)। দুটোর কোনটাই ভালো লাগেনি মোটেই। অবাক করার মতো ব্যাপার হলো স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে গল্প একেবারেই কম, মাত্র দুটো, তার মাঝে একটি ঐ ক্যথিড্রাল অফ হার্টস (আরেকটি আন্তনিও সানচেজ বারবুদো'র ‘ইন দ্যা ট্রেঞ্চেস’। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, 'ডনা বারতা' ঠিক যুদ্ধের গল্প নয়, তবে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত, চরিত্র গুলোর জীবনে যুদ্ধের যথেষ্টই প্রভাব আছে)। মানবসভ্যতার ইতিহাসে যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে এর চেয়েও ভালো মানের কাজ স্প্যানিশ ভাষায় হয়নি এটা মানতে পারছিনা। এখানটাতেই সংকলকের সাথে পাঠকের চাহিদার, এমনকি রুচিরও কিছুটা পার্থক্য বোধকরি তৈরী হয়েই যায়! স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে আমার পড়া এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ কাজ একজন আমেরিকানেরঃ আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (‘ফর হুম দ্যা বেল টোলস’)।
ভালো-মন্দ মিশিয়ে গ্রেট স্প্যানিশ স্টোরিস পড়বার অনুভূতিটা মিশ্র। আর কিছু না হোক, অসাধারণ কিছু লেখকের কাজের সাথে তো পরিচয় হয়ে গেলো। উইকিপিডিয়াতে স্প্যানিশ সাহিত্যের নিবন্ধটিতে যে লেখকদের উল্লেখ আছে, তাঁদের অনেককে, প্রায় বেশীরভাগকেই এক মলাটে নিয়ে এলো বইটি। এ ছাড়াও, একটি ব্যক্তিগত কারণে সংগ্রহের বইটি আমার কাছে বিশেষ হয়ে থাকবে। নিউ ইয়র্কের দি মর্ডার্ণ লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রকাশকাল ১৯৫৬। পুরনো বই সংগ্রহের একটা বাতিক আমার আছে। বাবার কাছ থেকে তাঁর সংগ্রহের আরো বহু বইয়ের সাথে সাথে দি অর্ডিল (আলেক্সেই টলস্টয়) এর চামড়ায় বাঁধানো তিন খন্ডও inherit করেছি বটে-যদ্দুর মনে পড়ছে, ওটা চল্লিশের দশকের শেষের দিকে প্রকাশিত-তবুও নিজের হাতে কেনা সবচেয়ে পুরনো বই এখন পর্যন্ত স্প্যানিশ গল্পের এই সংকলনই। আমার কাছে মনে হয় একেকটা বইয়ে তার প্রকাশনার সময়টা আটকা পড়ে যায়। সেই সময়ের ছাপা, বাঁধাই, হরফ, মলাট, কাগজ এ সবকিছু গল্পের পেছনের আরেকটা গল্প ধরে রাখে। লাল মলাটের এই ছোট্ট বইটি যতবার নিজের শেলফে দেখবো, ততবার ১৯৫৬তে ফিরে যাবো, মনে মনে ৫৬’র বই বানাবার গল্প বুনবো, ভাববো। কত মানুষের কত হাত ঘুরে তবে আমার হাতে এলো, মনে মনে সেই গল্পের একটা সিনেমা দেখে নেবো! পয়সা দিয়ে কেনা ক’টা বই এমন নির্খরচায় সিনেমা দেখিয়ে দেয় বলুন তো? ( )
A sterling collection of great Spanish stories, including Alarcon's "The Three-Cornered Hat," Galdos's "Torquemada in the Flames," and my favorite, Unamuno's "Saint Manuel Bueno, Martyr." The book jacket is much more attractive than the one pictured here. ( )
Tiedot englanninkielisestä Yhteisestä tiedosta.Muokkaa kotoistaaksesi se omalle kielellesi.
This record is for the anthology "Great Spanish Stories" published by the Modern Library. Please don't combine with the anthology "Great Spanish Short Stories" published by Dell in the Laurel edition, which contains a different selection of stories. Thank you.
Great Spanish Stories-এ সংকলিত হয়েছে ১৬টি গল্প। সবই যে আসলে প্রচলিত অর্থে ‘গল্প’ এমনও নয়। ব্যাপ্তিতে দীর্ঘ এমন গল্প যেমন আছে-উইকিপিডিয়া যেটিকে ‘নভেলা’ সংজ্ঞায়িত করেছে- দু’-তিন পৃষ্ঠার ছোট গল্পও তেমনি আছে। ছাত্রজীবনের মধ্যগগনে থাকবার অন্যতম একটি কুফল হলো কলেবরে দীর্ঘ বই পড়ার সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসা। সে কারণেই বইটিতে সংকলিত ছোট ছোট গল্পগুলোর প্রতিই আগ্রহটা বেশী ছিলো, সবার আগে পড়তে বসেছিলাম সেগুলোই। কিন্তু বইটিতে ঠাঁই পাওয়া ম্যাক্স অব, হোসে মারিয়া জিরোন্নেলা, কারমেন লাফোরেত, রাফায়েল দিয়েস্তস, রোসা চাচেল, আন্তনিও সানচেজ বারবুদো এঁরা সবাই ই হতাশ করেছেন। সময়ের সাথে সাথে বইটির শিরোনামের ‘Great’ বিশেষণটির ওপর ক্রমশই সন্দিহান হয়ে পড়ছিলাম!
প্রথম চমকটা পেলাম ফ্রান্সিসকো আয়ালার ‘দি বিউইচড’ (El Hechizado) গল্পটি পড়তে গিয়ে। গল্পের ‘বিউইচড’ বা 'জাদু-টোনাকৃত' অভিশপ্ত ভদ্রলোকটি হলেন হাবসবার্গ বংশের শেষ রাজা দ্বিতীয় চার্লস (১৬৬১-১৭০০)। ‘বিউইচড’ এর প্রসঙ্গে দ্বিতীয় চার্লসের ব্যাপারে ক’টি তথ্য জুড়ে না দিলেই নয়! হাবসবার্গ বংশটি ইওরোপের একটি বড় অংশ শাসন করেছে ১১শ শতক থেকে ১৭০০ সাল পর্যন্ত। এদের সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিলো ইওরোপের অস্ট্রিয়া, জার্মানী, হলি রোমান এম্পায়ার থেকে হাঙ্গেরী-ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল হয়ে উত্তর আমেরিকা লাগোয়া মেক্সিকো তক। দ্বিতীয় চার্লস এই হাবসবার্গ বংশের শেষ বাতি। নিজেদের রাজকীয় রক্তের শুদ্ধতা ধরে রাখতে হাবসবার্গ বংশে আন্তঃপারিবারিক বিবাহের ব্যাপারটি অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হতো। চার্লস দি সেকেন্ডের বাবা-মা ছিলো সম্পর্কে মামা-ভাগিনেয়। আন্তঃপারিবারিক সম্পর্কের জন্যই হাবসবার্গ বংশে নানারকম রোগব্যাধির প্রকোপ ছিলো, যার চূড়ান্ত রূপটা ধরা পড়ে এই দ্বিতীয় চার্লসের ভেতর (স্পেনেরই এক বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ সান্তিয়াগো দেল কম্পোস্তেলা হাবসবার্গ পরিবারের ১৬টি প্রজন্মের ৩০০০ সদস্যের ওপর গবেষণা করে আন্তর্জননকে পরিবারটির বিলীন হিয়ে যাবার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে)। চার্লস চার বছর বয়েস হবার আগে কথা বলতেই শেখেননি। সিংহাসনে আরোহণও তাঁর ঐ চার-এই। আজীবন মানসিক বৈকল্য নিয়ে বেঁচে থাকা চার্লসের শারীরিক ত্রুটিরও কোন অন্ত ছিলোনা। নির্বীজ হওয়ায় কোন বংশধরও রেখে যেতে পারেননি। ৩৮ বছর বয়েসে মারা যাবার আগে জীবনের শেষের দিকে রাজকার্য থেকে অবসর নিয়ে খেলাধুলো ও বিনোদনের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন চার্লস। চার্লসের মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তের ভারে থাকা ডাক্তার কাটাকাটি শেষে যে রায় দিয়েছিলেন তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়,
চার্লসেরঃ
চার্লস প্রসঙ্গে অনেক লম্বা গল্প ফেঁদে ফেলেছি, মূল প্রসঙ্গে যেতেই পারছিনা। চার্লসের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিবৃতি পড়লে বুঝতে কষ্ট হয়না রাজ্যপতি হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন। চার্লস যখন সিংহাসনে আসীন হন, স্পেন তার গৌরব হারাতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। অর্থনৈতিক মন্দা বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, খরায় প্রজাদের প্রাণপাতও কিছু কম হচ্ছেনা। ফ্রান্সিসকো আয়ালা এই সময়কেই ধরেছেন তাঁর ‘দি বিউইচড’ গল্পে। স্প্যানিশ এক নাগরিক বহু নিয়মকানুনের যাঁতাকল ঠেলে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে স্পেনের রাজা চার্লসের দরবারে হাজির হন রাজার দেখা পাবার আশায়। কিন্তু জড়বুদ্ধির রাজাকে দেখে স্প্যানিয়ার্ডের মোহ ভাঙ্গে, বুঝতে পারেন, রাজা কথাই বলেন বহু ক্লেশে, রাজ্য পরিচালনা তো দূর কি বাত। মূলত দু’টি বিষয় উঠে এসেছে এই গল্পে। এক হলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রগুলোতে অহেতুক কালক্ষেপণকারী ফালতু নিয়মের বোঝা- আধুনিক সময়ে যার গালভরা নাম ‘প্রটোকল’-আর দ্বিতীয়টি হলো অযোগ্য শাসকের হাতে দেশের শাসনভার। স্রেফ বংশগত অধিকারের সুবাদে একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মানুষকে দেশ পরিচালনার আসনে বসিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ প্রজার জীবন নিয়ে জুয়া খেলা হলো। হা বংশগৌরব! হা রক্তের শুদ্ধতা! ‘বিউইচড’ গল্পে ফ্রান্সিসকো আয়ালা এক ধরণের বিটকেলে সেন্স অফ হিউমারের পরিচয় দেন। আয়ালার এই দুষ্টুমি, পরিস্থিতি নিয়ে খেলা করবার এই ‘বদমায়েশি’ টা বাঙ্গালী পাঠককে মনে করিয়ে দেবে আহমদ ছফা কিংবা শহিদুল জহির এর কথা। ‘Great minds think alike’ নাকি ‘সব শেয়ালের এক রা’, সে আমি জানিনে, তবে হৃদয়ের গহীনে যে পবিত্র বেদীতে এতদিন ছফা এবং জহির বসে এসেছেন, তাঁদের সাথে এবার এসে যোগ দিলেন ফ্রান্সিসকো আয়ালাও। আমার রুচিবোধের ওপর যাঁদের বিশেষ আস্থা নেই, ছোট্ট করে এখানে জানিয়ে রাখি, হোর্হে বোর্হেস গল্পটিকে স্প্যানিশ ভাষার অন্যতম মাস্টারপিস বলে অভিহিত করেছেন!
পাঠককে ভাবাবার মতো আরেকটি গল্প মিগুয়েল দে উনামুনো’র ‘সেইন্ট ম্যানুয়েল বুয়েনো, মার্টায়ার’। স্প্যানিশ Bueno শব্দটির অর্থ ‘ভালো’। ভালভেরদে দে লুসেরনা গ্রামের এক পাদ্রী ডন ম্যানুয়েল তাঁর রোজগেরে জীবন যাপনে, পরোপকারে, দয়া দাক্ষিণ্যে এতোটাই ত্যাগী ও উদারহস্ত, তাঁর মহত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ গ্রামবাসীর মুখে bueno শব্দটিই একসময় তাঁর নামের অংশ হয়ে পড়ে (এটি অবশ্য আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি, গল্পে নামের ব্যাখ্যায় এমন কিছু বলা হয়নি)। আক্ষরিক অনুবাদ করা হলে গল্পটির ইংরেজী নাম হবে Saint Manuel, the Good, Martyr। গল্পের কথক এক নারী (অ্যাঞ্জেলা) যে শেষ বয়েসে তার গ্রামের পাদ্রীর স্মৃতিচারণ করছে। অ্যাঞ্জেলার আমেরিকা প্রবাসী ভাই ল্যাজারাস ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয়, তার ধারণা ডন ম্যানুয়েল লোকটি ধাপ্পাবাজ বিশেষ, গ্রামের সহজ সরল লোকদের সামনে ভালোমানুষির মুখোশ পরে bueno হয়ে গেছে। এহেন ল্যাজারাসও একসময় স্বীকার করতে বাধ্য হয় ডন ম্যানুয়েল সত্যিই দারুণ ভালোমানুষ, ভালো করবার ইচ্ছেটা তাঁর আন্তরিক ই বটে। মানুষকে ঈশ্বরের পথে আনতে তাঁর পরিশ্রমের অন্ত নেই, আর সে পরিশ্রমে নেই কোন ক্লান্তি বা খেদ। ক্রমে ল্যাজারাস এবং সেই সাথে সাথে পাঠকও আবিষ্কার করে পরকালে ডন ম্যানুয়েলের আসলে কোন বিশ্বাস নেই, নেই ঈশ্বরেও! তাহলে কেন ডন ম্যানুয়েল বছরের পর বছর এই গ্রামে ধর্ম প্রচার করে যাচ্ছেন? কেন ঈশ্বরের পথে আসবার আহবান দিয়ে আসছেন? ভোরের আলো ফুটবার মতোই পাঠকের কাছে ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয় ডন ম্যানুয়েল আসলে শান্তি চান; নিজের মনের শান্তি নয়, গ্রামের মানুষেরা শান্তিতে বসবাস করুক এটাই ডনের চাওয়া। এরা কেউ ল্যাজারাস এর মতো বহির্মুখী নয়, চিন্তাশীল নয়; পৃথিবীর আর দশটা দিক দেখে, যুক্তি দিয়ে ভেবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেবে, এটি তাদের জন্য নিতান্তই কষ্টকল্পনা, এবং তাতে অশান্তিই বেশী বরং। এতগুলো নেহাৎ গেঁয়ো অর্ধ-অল্পশিক্ষিত মানুষকে ঝগড়া বিবাদ থেকে দূরে সরিয়ে ঈশ্বর নামের ছায়াতলে একত্র করে ডন ম্যানুয়েল শান্তি খোঁজেন। এই কাজেই তিনি গোটা জীবনটা ব্যয় করে দেন ভালভেরদে দে লুসেরনা নামের সেই ছোট্ট গ্রামে। ডন ম্যানুয়েল কি 'শহীদ' নন?
ডন ম্যানুয়েলের গল্পটি লিখতে মিগুয়েল দে উনামুনো’র ২ মাস লেগে যায়। এটি ছোট গল্পও নয়, নভেলাও নয়। উনামুনো’র নিজস্ব আবিষ্কার ‘নিভোলা’। নিভোলার সংজ্ঞা কি, বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি,ইত্যাদি তত্ত্বগত আলোচনায় আগ্রহ থাকলে উৎসাহী পাঠক উইকিপিডিয়াতে Nivola নিবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন। সদ্য লব্ধ জ্ঞান কপচিয়ে অন্যদের আর ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে চাইছিনা আপাতত!
সংকলনের ১৬টি গল্পের মাঝে এই দুটি ছাড়াও আরো দু'টি গল্প বিশেষ ভালো লেগেছে। একটি পেদ্রো আন্তনিও দে আলারকন এর ‘দ্যা থ্রি কর্নার্ড হ্যাট’ ও আরেকটি লিওপল্ডো অ্যালাস এর ‘ডনা বারতা’। 'দ্যা থ্রি কর্নার্ড হ্যাট' স্প্যানিশ কমেডির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। পেদ্রো আন্তনিও’র মাঝে সারভান্তেস এর ছাপ তো আছেই, গল্পের স্যাটায়ারের মারপ্যাঁচ হালের জর্জ অরওয়েলকেও মনে করিয়ে দেবে! থ্রি কর্নার্ড হ্যাট এর ব্যাপারে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য তথ্য যোগ করাটা জরুরী। ১৯১৯ সালে স্প্যানিশ কম্পোজার ম্যানুয়েল দে ফাল্লা গল্পটির অবলম্বনে একই নামের একটি ব্যালে রচনা করেন, যা আজও সমান জনপ্রিয়। ইউটিউব ঢুঁড়লেই অসংখ্য ভিডিও পাওয়া যায় ফাল্লার এই ব্যালের; সেটাই এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ! এখানে বিবিসি প্রমস এ ২০১৩ সালে পরিবেশিত দ্যা থ্রি কর্নার্ড হ্যাট এর লিঙ্ক জুড়ে দিলুম। স্প্যানিশ সঙ্গীতের যে ঝংকারময় উদ্দাম বুনো রুপ, তার পুরোদস্তুর স্বাদ বিদ্যমান এতে!
'থ্রি কর্নার্ড হ্যাট' যেমন কমিক, হাস্যরসে ভরপুর, ‘ডনা বারতা’ তেমনি করুণ; পড়ে মন খারাপ হয় ভীষণ। জীবন-সায়াহ্নে দাঁড়ানো এক মায়ের তাঁর কখনো না দেখা যুদ্ধে নিহত অবৈধ সন্তানের প্রতিকৃতি একবার দেখতে চাওয়ার আকুতি আর হাহাকারের গল্প ডনা বারতা; রীতিমতো রুপালী পর্দার ছবির গল্প। ডনা বারতার লেখক লিওপল্ডো অ্যালাস স্প্যানিশ সাহিত্যেরই অন্যতম স্তম্ভ। অ্যালাসকে নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে জানতে পেলাম তাঁর উপন্যাস ‘লা রেজেনেতা’ (La Regeneta)’র কথা, যা উনিশ শতকেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি কাজ বলে সম্মানিত। চোখ বন্ধ করে তাই ‘লা রেজেনেতা’ চলে গেলো কখনো শেষ না হবার সেই তালিকায়।
টুকটাক আরো কিছু গল্প ভালো লেগেছে, এগুলোর উল্লেখ না করলে অন্যায়ই হবে। রেমন মারিয়া দেল ভাল্লে-ইনক্লান এর ‘সোনাটা অফ অটাম’ ও বেনিতো পেরেজ গালদোস এর ‘তর্কেমাদা ইন ফ্লেমস’ এদের মাঝে অন্যতম। পৃথিবীকে দেয়া স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপহার 'ম্যাজিক রিয়ালিজম', ল্যাটিন আমেরিকানদের চর্চার আধিক্যে যা স্প্যানিশ সাহিত্যেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে অনেকটা। জাদুবাস্তবতার ছাপ এসেছে এই সংকলনের কয়েকটি গল্পেও (যেমন ‘মাস্টার পেরেজ দি অরগ্যানিস্টঃ’ গীর্জার মায়েস্ত্রো অরগ্যান বাদক মাস্টার পেরেজের মৃত্যুর পর ভুত হয়ে অরগ্যান বাজাতে চলে আসা) ও ‘দ্যা ক্যাথিড্রাল অফ হার্টস’ (মানুষের তাজা হৃৎপিণ্ড দিয়ে ক্যাথিড্রাল বানাবার গল্প)। দুটোর কোনটাই ভালো লাগেনি মোটেই। অবাক করার মতো ব্যাপার হলো স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে গল্প একেবারেই কম, মাত্র দুটো, তার মাঝে একটি ঐ ক্যথিড্রাল অফ হার্টস (আরেকটি আন্তনিও সানচেজ বারবুদো'র ‘ইন দ্যা ট্রেঞ্চেস’। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, 'ডনা বারতা' ঠিক যুদ্ধের গল্প নয়, তবে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত, চরিত্র গুলোর জীবনে যুদ্ধের যথেষ্টই প্রভাব আছে)। মানবসভ্যতার ইতিহাসে যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে এর চেয়েও ভালো মানের কাজ স্প্যানিশ ভাষায় হয়নি এটা মানতে পারছিনা। এখানটাতেই সংকলকের সাথে পাঠকের চাহিদার, এমনকি রুচিরও কিছুটা পার্থক্য বোধকরি তৈরী হয়েই যায়! স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে আমার পড়া এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ কাজ একজন আমেরিকানেরঃ আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (‘ফর হুম দ্যা বেল টোলস’)।
ভালো-মন্দ মিশিয়ে গ্রেট স্প্যানিশ স্টোরিস পড়বার অনুভূতিটা মিশ্র। আর কিছু না হোক, অসাধারণ কিছু লেখকের কাজের সাথে তো পরিচয় হয়ে গেলো। উইকিপিডিয়াতে স্প্যানিশ সাহিত্যের নিবন্ধটিতে যে লেখকদের উল্লেখ আছে, তাঁদের অনেককে, প্রায় বেশীরভাগকেই এক মলাটে নিয়ে এলো বইটি। এ ছাড়াও, একটি ব্যক্তিগত কারণে সংগ্রহের বইটি আমার কাছে বিশেষ হয়ে থাকবে। নিউ ইয়র্কের দি মর্ডার্ণ লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রকাশকাল ১৯৫৬। পুরনো বই সংগ্রহের একটা বাতিক আমার আছে। বাবার কাছ থেকে তাঁর সংগ্রহের আরো বহু বইয়ের সাথে সাথে দি অর্ডিল (আলেক্সেই টলস্টয়) এর চামড়ায় বাঁধানো তিন খন্ডও inherit করেছি বটে-যদ্দুর মনে পড়ছে, ওটা চল্লিশের দশকের শেষের দিকে প্রকাশিত-তবুও নিজের হাতে কেনা সবচেয়ে পুরনো বই এখন পর্যন্ত স্প্যানিশ গল্পের এই সংকলনই। আমার কাছে মনে হয় একেকটা বইয়ে তার প্রকাশনার সময়টা আটকা পড়ে যায়। সেই সময়ের ছাপা, বাঁধাই, হরফ, মলাট, কাগজ এ সবকিছু গল্পের পেছনের আরেকটা গল্প ধরে রাখে। লাল মলাটের এই ছোট্ট বইটি যতবার নিজের শেলফে দেখবো, ততবার ১৯৫৬তে ফিরে যাবো, মনে মনে ৫৬’র বই বানাবার গল্প বুনবো, ভাববো। কত মানুষের কত হাত ঘুরে তবে আমার হাতে এলো, মনে মনে সেই গল্পের একটা সিনেমা দেখে নেবো! পয়সা দিয়ে কেনা ক’টা বই এমন নির্খরচায় সিনেমা দেখিয়ে দেয় বলুন তো?
(